ঘাম দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিবেশ, পরিস্থিতি, বয়স ও লিঙ্গভেদে একেকজনের ঘাম হয় একেক রকম। আবার যারা দৈহিক পরিশ্রম করেন, তাদের ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে অন্যদের তুলনায় বেশি। যেসব নারী রান্নাঘরে চুলার কাছে কাজ করেন বেশি, অন্যদের তুলনায় তারা বেশি ঘামেন। আমাদের দেহের পুরো ত্বকে রয়েছে অসংখ্য ঘামগ্রন্থি। এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। এ গ্রন্থিগুলো দেহের দূষিত পদার্থ ঘামের মাধ্যমে বাইরে বের করে দেয়। ঘেমে যাওয়া প্রসঙ্গে স্কয়ার হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন ও অ্যান্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. প্রতীক দেওয়ান বলেন, স্বাভাবিক ঘেমে যাওয়ার সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক নেই। তবে কেউ অতিরিক্ত ঘামলে ও দুর্গন্ধযুক্ত হলে অবশ্যই হরমোনের পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ দেহের থাইরয়েড গ্রন্থির এক ধরনের হরমোন অতিরিক্ত কমে গেলে মানুষের ঘামের পরিমাণ বাড়ে। তবে বেশি ঘেমে যাওয়ার জন্য সব সময় হরমোন দায়ী নয়। হঠাৎ করে রক্তে চিনির পরিমাণ কমে গেলে, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগলে দেহের স্নায়ুগুলো দুর্বল হলে মানুষ ঘামে বেশি। দেহের গড়ন, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও আবহাওয়ার বিরুদ্ধে পোশাক হলে ঘামের পরিমাণ বাড়ে। আর নারীদের মাসিক চিরতরে বন্ধ হওয়ার পর হট ফ্ল্যাশ হয়। হট ফ্ল্যাশ হলে মুখ, দেহ ও মাথায় গরম লাগে বেশি। এ সময় অধিকাংশ নারী বেশি ঘামেন। সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে ঘামের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয়ে তৈরি হয় দুর্গন্ধ। দীর্ঘদিন ব্যাকটেরিয়া জমে বিভিন্ন চর্মরোগ হয়।
দুর্গন্ধ দূর করুন : নিয়মিত পরিষ্কার পানিতে গোসল, বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখা, রক্তচাপ ও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলে পরার বস্ত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একদিন কাপড়ে স্যাভলন কিংবা ডেটল দিয়ে ধুয়ে নিন।
চুলার কাছে কাজ বেশি থাকলে রান্নাঘরে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখুন। মাঝে মধ্যে মুখ ধুয়ে ফেলুন। গোসলের পানিতে গোলপ জল বা গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে নিন। এতে দেহে সুগন্ধ থাকবে অনেকক্ষণ। নিয়মিত পারফিউম, বডিস্প্র্রে, সুগন্ধযুক্ত পাউডার ও ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন।
টাটকা খাবার খান। মেনোপোজ হওয়ার পর হরমোন পরীক্ষা করাবেন। পরিমাণমতো পানি পান করুন। এতে দেহের রোগ-জীবাণু মূত্রের সাহায্যে বাইরে বের হয়ে যায়। ঘেমে যাওয়ার পরই গোসল বা ঠা-া পানি পান করবেন না। ঘাম মুছে কিছু সময় বিরতি দিয়ে গোসল করুন বা ঠা-া খান। দেহের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করুন। পরিচ্ছন্নতার অভাবে লোমকূপের গোড়ায় রোগ-জীবাণু জমে, ত্বকে সঠিকভাবে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না, ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বলতাহীন ও কালচে।
ছয় মাস পর পর বা সম্ভব হলে প্রতি বছর হরমোন, পুরো পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা করান। বুকের ইসিজি (হৃৎপি-ের পরীক্ষা) করানোটাও জরুরি। কারণ হার্ট, হরমোন ও রক্তের কিছু অসুখ আছেÑ যেগুলোয় মানুষ অতিরিক্ত ঘেমে যায়। ঘামে ভিজে যাওয়া কাপড় বাতাসে শুকিয়ে পরার অভ্যাস ত্যাগ করুন। সামান্য কিছু সতর্কতা আপনাকে করবে ঘামমুক্ত, স্নিগ্ধ ও সুন্দর। সেই সঙ্গে হবেন রোগমুক্তও।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ,
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক (অগ্রদৃষ্টি নিউজ পোর্টাল)
প্রধান সম্পাদক- কুয়েত বাংলা নিউজ ( http://kuwaitbanglanews.com/ )